এথনিক গোষ্ঠীর সংজ্ঞা দাও অথবা, এথনিসিটি বলতে তুমি কী বুঝ?
ভূমিকা: নৃগোষ্ঠী বলতে আমরা জৈবিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে জনগণের শ্রেণিবিভাজনকে বোঝালেও এথনিক গ্রুপ আমরা নির্ধারণ করি সাংস্কিতিক বৈশিষ্ট্যর ভিত্তিতে । নৃবিজ্ঞানীদের পরিভাষাই এথনিক অর্থ হচ্ছে পূর্বপুরুষ ও সংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার ভিত্তিতে দলবদ্ধ একক জনগোষ্ঠী। যাদের রয়েছে নিজস্ব জাতিগত উৎসস্থল, আলাদা খাদ্যাভ্যাস, পোশাক পরিচ্ছদের ধরন, পারিবারিক নাম এবং সম্পর্ক, ভাষা, গানবাজনা, ধর্ম এবং অন্যান্য প্রথাবলি।
এথনিক গ্রুপ: এখনিক গ্রুপ হাচ্ছে এমন কিছু জনসংখ্যার সমষ্টি, যার সদস্যরা একে অপরের সাথে অভিন্ন কোনো কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের কারণে পরিচিত। এই ঐতিহ্যগত পরিচিতিটি হতে পারে আন্তরিক কিংবা কাল্পনিক। তবে যাই হোক না কেন, এখনিক গ্রুপের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সাংস্কৃতিক।
ইংরেজি Ethnicity এবং Ethnic group এই দুটি পরিভাষা এসেছে মূলত গ্রিক শব্দ Ethnos থেকে। এখনোস বলতে তখন গ্রিক ভাষায় নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জাতিকে বোঝানো হতো। যাদের বংশগত পরিচয় একই এবং যাদের ভিন্ন একটি সাধারণ সংস্কৃতি রয়েছে। এথনিক পরিভাষাটিকে পরবর্তীতে ইংরেজিতে ব্যবহৃত হয়।
১৪ শ শতাব্দীতে বহু ঈশ্বরবাদী জনগোষ্ঠীকে কিংবা অবিশ্বাসী জনগোষ্ঠীকে বোঝার জন্য যারা খ্রিষ্টান ধর্মের অন্তর্ভুক্ত নয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা: বিভিন্ন নৃবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে এথনিক গ্রুপের সংজ্ঞা দিয়েছেন, যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
Prof William P. Scott তাঁর Dictionary of Sociology (1988)-তে বলেন, এখনিক গোষ্ঠী বলতে এমন এক গোষ্ঠীকে বোঝায়, যাদের একটি সাধারণ সাংস্কৃতিক ঐহিয়া রয়েছে এবং যারা নিজস্ব পরিচিতিসহ বৃহৎ কোনো সমাজের উপগোষ্ঠী হিসেবে বসবাস করে।
Oxford English Dictionary'র সংজ্ঞা অনুযায়ী, "এখনিক গ্রুপ বলতে সাধারণত নির্দিষ্ট কোনো নৃগোষ্ঠীকে বোঝায়, যা বৃহত্তয় জাতিয় সদস্যদের কাছে কিছুটা অদ্ভুত প্রকৃতির মনে হয়। এথনিক, এমনিক গ্রুপের থাকতে পারে অভিন্ন নৃগোষ্ঠী, ধর্মীয় এবং ভাষাগত বৈশিষ্ট্য। তবে সাধারণত বৃহত্তর সামাজিক কিংবা জাতীয় ব্যবস্থায় মাওতায় ভিন্ন কোনো দল কিংবা নৃগোষ্ঠীকেই এথনিক গ্রুপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই জন্যই যুক্তরাষ্ট্রের এখনিক গ্রুপ বলতে ভিনদেশি বিকম্ভুতকিমাকার ব্যক্তি ও তার পরিচয়কে বোঝানো হয়।"
Marcos Banks বলেন, "এথনিক এল্প হচ্ছে এমন কিছু জনসংখ্যার সমষ্টি যার সদস্যরা একে অর্থরের সাথে অভিন্ন কোনো কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের কারণে পরিচিত। এই ঐতিহ্যগত পরিচিতি হতে পারে বাস্তবিক কিংবা কাল্পনিক। তবে যাই হোক না কেন, এখনিক গ্রুপের মূল বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সাংস্কৃতিক।"
এথনিক গোষ্ঠীদের সাধারণত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত মনে করা হয়ে থাকে। তাদের আলাদা দৈহিক গঠন ও সাংস্কৃতিক ভিন্নতা রয়েছে। এদের নৃবিজ্ঞানে সাংস্কৃতিক কারণেই এথনিক গ্রুপ বলা হয়। যার সদস্যরা একটি স্বতন্ত্র পরিচয় সম্পর্কে সচেতন এবং যাদের একটা ঐকোর অনুভূতি বিদ্যমান।
এখনিক গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্যসমূহ
এথনিক গ্রুপ কিছু ভিন্ন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জাতিগোষ্ঠী। তাদের আলাদা দৈহিক গঠন, জাতিগত উৎসস্থল, আলাদা খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছদের ধরুন, পারিবারিক নাম এবং সম্পর্ক, ভাষা, গানবাজনা, ধর্ম এবংও সাংস্কৃতিক ভিন্নতা রয়েছে। এখনিক গোষ্ঠীর কতকগুলো সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন-
১. এখনিক গোষ্ঠীর রয়েছে নিজস্ব ভাষা, ধর্ম ও সংস্কৃতি।
২. এখনিক গোষ্ঠী একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে বসবাস করে।
৩. এথনিক গোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্যের ধারণা বিদ্যমান। ৪.
৪. সাধারণ সংস্কৃতির অংশীদার।
৫. এখনিক গোষ্ঠীর সদস্যদের সাথে অর্থনৈতিক জীবনপ্রণালিতে রয়েছে ঐক্য।
৬. জ্ঞাতিবন্ধন সুদৃঢ় হয়।
৭. এথনিক গোষ্ঠীর সদস্যরা বিশ্বাস করে যে, তারা একই পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে।
৮. এথনিক গোষ্ঠী বংশগতভাবে শারীরিক ও সংস্কৃতিতে আলাদা।

No comments:
Post a Comment